ডায়াবেটিস রোগীরা কতটুকু হাঁটবেন


 

বর্তমানে ডায়াবেটিস বেশ প্রচলিত একটি রোগ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস,নিয়মানুবর্তী জীবন এবং ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৮০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. আসাদুর কবীর। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন : আমাদের দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা কত?

উত্তর : আজ থেকে বোধ হয় পাঁচ বছর আগে একটি জরিপ করা হয়, দেশের জনসংখ্যার সাত শতাংশ লোকের ডায়াবেটিস রয়েছে। বর্তমানে সেটি প্রায় ১০ শতাংশ। দেশের সব মানুষের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

এটির প্রার্দুভাব কেন এত দ্রুত বাড়ছে? আমরা আমাদের দেশ নিয়ে চিন্তা করছি। এ দেশে এটি কেন এত বাড়ছে? কিছু খাদ্য, কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থা- সবকিছু মিলিয়ে ডায়াবেটিস হচ্ছে।

যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস আছে, তারা অবশ্যই চিন্তা করবে আমার ডায়াবেটিস হয়েছে কি না। যারা ইচ্ছামত খাবার খায় তাদের একটি আশঙ্কা থাকে ডায়াবেটিস হওয়ার।

আপনি দেখেন, আমাদের দেশের কোনো খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ লেখা থাকে না। আসলে আমাদের জীবন যাপনের ধরন এবং খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।


প্রশ্ন : একজন রোগীকে আপনারা কখন বলেন ডায়াবেটিক রোগী?

উত্তর : একজন রোগীর ডায়াবেটিস রোগ আছে কি না, সেটি দেখতে হলে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। একটি হলো খালি পেটে, আরেকটি হলো ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার পরে। এ দুটো স্যাম্পল নিয়ে আমরা পরীক্ষা করে বলে দিতে পারি ডায়াবেটিস আছে কি না। এ ছাড়া, আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন থেকে নতুন আরেকটি পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। এটি হলো, হিমোগ্লোবিন এওয়ানসি; এটি একটি নতুন টেস্ট। এতে গত চার মাসের রক্তের শর্করার গড় পরীক্ষা করা হয়। এই গড় যদি ছয় দশমিক পাঁচ ভাগের উপরে থাকে, তাহলে তার ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরা হয়।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস হলে কী সমস্যা হয়?

উত্তর : দেখুন, আপনার শরীরে যদি সুগার বেশি থাকে, তাহলে আপনার চলতে ফিরতে কোনো সমস্যা হবে না। রক্ত শরীরের প্রতিটি কণায় কণায় পৌঁছে। চোখ, মাথা, মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে সব জায়গায়। আর রক্তে সুগার থাকে। ডায়াবেটিস হলে, তার চোখে সমস্যা হবে, কিডনিতে সমস্যা হবে, হার্টে সমস্যা হবে, নার্ভে সমস্যা হবে। বহু রোগীকে আপনি বলতে শুনবেন তার শরীর জ্বালাপোড়া করে। বিশেষ করে হাতের পাতায়, পায়ের পাতায়। এই জ্বালাপোড়া রোগ তার স্নায়ুর অস্বস্তির জন্য হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে ডায়াবেটিস। রোগী কিন্তু কখনো বলে না আমার ডায়াবেটিস রয়েছে। রোগী বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে আসে, এর মধ্যে অন্যতম লক্ষণ হলো জ্বালাপোড়া। এই ধরনের সমস্যা ডায়াবেটিস রোগীর সবচেয়ে বেশি হয়।

প্রশ্ন : এসব সমস্যা প্রতিরোধের জন্য কী করতে হবে?

উত্তর : প্রতিরোধের জন্য আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের মূল কিছু জিনিস রয়েছে। একে বলা হয়, ডায়েট (খাদ্যাভ্যাস), ড্রাগ (ওষুধ) এবং ডিসিপ্লিন (নিয়মানুবর্তিতা), একসাথে এই তিনটিকে বলা হয় ডিডিডি।

প্রশ্ন : বিষয়গুলো যদি একটু বুঝিয়ে বলেন?

উত্তর : ডায়েট মানে হলো খাবার, আপনি কোন জিনিসগুলো খাবেন, আর কোন জিনিসগুলো খাবেন না- এটি। এক নম্বর হলো, আপনি কখনো চিনি জাতীয় জিনিস খাবেন না। আর কিছু খাবার  আমরা খেতে নিষেধ করি। এর মধ্যে একটি হলো শর্করা। শর্করাকে আমরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দিয়ে থাকি। সবজিকে আমরা বাড়িয়ে খেতে বলি। শর্করা মানে ভাত, রুটি। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে, যখন একটি মানুষের ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়, তখন তার ওজন ও উচ্চতা কত- তার ওপর। ওজন ও উচ্চতা দেখে একটি খাদ্যতালিকা করা হয়। পুষ্টিবিদরা আমাদের সাহায্য করেন। একেকজনের জন্য একেক রকম খাদ্যতালিকা হয়।

প্রশ্ন : ডিসিপ্লিন বিষয়টি কী?

উত্তর : ডিসিপ্লিন হচ্ছে নিয়মিত হাঁটা। আপনি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় হাঁটবেন। যেই গ্লুকোজগুলো আপনার শরীরে সংরক্ষিত অবস্থায় আছে সেগুলোকে পোড়ানো।

প্রশ্ন : আপনি যে কথাগুলো বললেন, খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মানুবর্তী জীবন যাপন করা –এগুলো তো সবারই সুস্থ থাকার জন্য দরকার। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এগুলো আলাদাভাবে প্রয়োজন কেন?

উত্তর : এগুলো ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তার তো জটিলতা বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডায়াবেটিস থেকে তার তাৎক্ষণিক কিছু জটিলতা হয়, আবার দীর্ঘমেয়াদি কিছু জটিলতা হয়। যেহেতু তিনি একটি সমস্যা বহন করছেন, এটি যোগ হলে সমস্যা দ্রুত বাড়বে। ডায়াবেটিস যার আছে, যার সুগার বেশি, তার ওজন এমনিতেই বেড়ে যায়। আপনি যদি ইচ্ছেমতো ক্যালোরি গ্রহণ করে, তাহলে তো জিনিসটি দিন দিন আরো খারাপ হতে থাকবে।

প্রশ্ন : ড্রাগ (ওষুধ) নিয়ে একটু বলেন? অনেকের ওষুধের বিষয়ে একটু ভয় এবং অনীহা কাজ করে। আপনারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন দেন। অনেকে ভাবেন, একবার ইনসুলিন নিলে আমি এখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারব না। আসলে বিষয়টি কী?

উত্তর : একজন রোগীর যখন রোগ নির্ণয় করা হয়, তার যদি অনেক সুগার থাকে, একে আপনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবেন? নিয়ে আসতে হলে ইনসুলিন দিয়ে নিয়ে আসাটা সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ আপনার শরীরে ইনসুলিন কম আছে। বাইরের থেকে ইনসুলিন দিয়ে সুগারকে আমি স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসলাম। তারপর আমি দেখব তার কতটুকু ইনসুলিন লাগে, ট্যাবলেটে আসা যায় কি না।

ইনসুলিন নিলেই যে সারাজীবন নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ইনসুলিন নেওয়ার পর আমরা ট্যাবলেটেও আসি। অনেক সময় কোনো ক্ষেত্রে জটিল অবস্থায় যখন অস্ত্রোপচার হয়, তখনো  কিন্তু আমরা ইনসুলিন দেই। পরে আবার ট্যাবলেটে চলে যাই। এটি একটি ভুল ধারণা যে ইনসুলিন নিলে আর কখনো ট্যাবলেট নেওয়া যাবে না। যার দরকার তাকে আমরা ইনসুলিন দেব।

এখন যদি কারো ইনসুলিনের (রিকুয়ারমেন্ট) চাহিদা অনেক হয় তাকে ট্যাবলেটে আনা যাবে না। তবে তার জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করার পর যদি দেখা যায়, কোনো সমস্যা নেই তখন আমরা ট্যাবলেটে আসতে পারি।

প্রশ্ন : একজন ডায়াবেটিক রোগীর জন্য কোন ধরনের ব্যায়ামের পরামর্শ দেন? তিনি কতটুকু হাঁটবেন?

উত্তর : ডায়াবেটিস রোগীর জন্য হাঁটা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। সে হাঁটবে অন্তত ৪৫ মিনিটের কিছু বেশি। একটু গতি বেশি রাখতে হবে। যেকোনো সময়ই করতে হবে। তবে নির্দিষ্ট একটি সময়ে। কেউ যদি সকালে সুবিধা বোধ করে, সকালে করতে হবে। কেউ যদি সন্ধ্যায় মনে করে, তখন করতে হবে। আপনার সুবিধামতো একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটবেন। প্রতিদিন কাছাকাছি সময়ে হাঁটলে ভালো হয়। তবে যার অন্য ধরনের সমস্যা আছে, তার হাঁটতে গিয়ে অন্য রোগ বাড়িয়ে ফেললে হবে না। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Comments